মানব জীবনকে সহজলভ্য করে তুলতে পারে এমন বিভিন্ন উপাদান বা বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করে থাকি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, মানুষের শৌখিনতা ও কল্পনাও তেমনই একটা উপাদান হতে পারে, যেমনটি হলো ক্যামেরা। প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি, শখের বস্তু বা দৃশ্যের ছবিকে ধরে রাখা বা রেকর্ড রাখার একটি অনন্য উপকরণ হলো এই ক্যামেরা।
ল্যাটিন শব্দ ‘Camera’ হলো একটি ডিভাইস যা সমতল পৃষ্ঠের উপর বাহ্যিক বাস্তব চিত্রকে প্রকাশ করতে পারে। পৃথিবীর প্রথম ক্যামেরা হলো ‘Camera obscura’ যার অর্থ ‘Dark Chamber’। এটি মূলত একটা অন্ধকার ঘর বা তাঁবু, যার সামনের দেয়ালে থাকা একটা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে আলো প্রবেশ করে তার বিপরীত দেয়ালে চিত্রের উল্টো প্রতিবিম্ব ফেলে এবং সেই প্রতিবিম্বকেই পরে আঁকা হতো। যে নীতির প্রয়োগ এখানে ঘটেছিল তার সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দিয়েছিলেন চীনা দার্শনিক মোযি (খ্রীস্টপূর্ব ৪৭০-খ্রীস্টপূর্ব ৩৯১)। ১১ শতকের আরব পদার্থবিদ ইবন আল হাইথাম (আলহাযেন) কে সাধারণত ‘Camera Obscura’ এর জনক বলা হয়। ‘Camera Obscura’ তে তখন লেন্স আর ‘Pinhole Camera’ তে ছিদ্র থাকতো। যদিও এতে আসলে ছবি তোলা হতো না।
১৭৭৭ সালে, সুইডিশ রসায়নবিদ Carl William Seheel আঁকার পরিবর্তে বাক্সের ভেতরেই ছবিকে বন্দী করে ফেলার জন্য আলোর উপস্থিতিতে সিলভার লবণের কালো বর্ণ ধারণ ও অ্যামোনিয়া দ্রবণে দ্রবীভূত হওয়ার ধারণাকে কাজে লাগাতে চান। Thomas Wedgwood প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই প্রক্রিয়ায় ছবি তুলতে গিয়েও ব্যর্থ হন। ১৮১৬ সাল থেকে প্রায় ১০ বছরের সাধনার পর Joseph Nicéphore Niépce ১৮২৫ মতান্তরে ১৮২৬ সালে ক্যামেরা তৈরি করেন। তিনি দস্তার পাত্রে বিটুমিনের প্রলেপ লাগিয়ে ৮ ঘন্টা সূর্যের আলোয় ছবিটি তৈরি করেছিলেন, এই কৌশলের নাম দিয়েছিলেন ‘Heliography’। ১৮২৯ সালে Louis Daguerre ব্যবহারিক ছবি তুলতে পারার প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। ১৮৪০ সালে Alexander Wolcott প্রথম সফল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। একই সময়, William Henry Fox Talbot আলোক সংবেদী নেগেটিভ ইমেজ থেকে একাধিক পজিটিভ ইমেজে রূপ দান করে স্থায়ী চিত্র ধারণে সক্ষম হন, যাকে ‘Calotype’ প্রক্রিয়া বলা হয়।
১৮৮৮ সালে George Eastman প্রথম ক্যামেরা কোম্পানি ‘Kodak’ এর মাধ্যমে হাতে বহনযোগ্য ক্যামেরা ও পেপার ফিল্ম তৈরি করেন। এর সাহায্যে ক্যামেরা সাধারণ মানুষের হাতে আসে। ১ বছর পর সেলুলয়েড ফিল্মের প্রচলন ঘটে। ১৯৪৮ সালে পোলারয়েড ক্যামেরা তৈরি হয় যার সাহায্যে ১ মিনিটে ছবি পাওয়া সম্ভব হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ক্যামেরা জগতের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন আমাদের হাতে এসেছে ডিজিটাল ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরা। যত ধরনের উন্নয়নই ঘটানো হোক না কেন, ক্যামেরায় ছবি ধারণের উদ্দেশ্যটা কিন্তু একই রয়ে গেছে; শখের বস্তু, সুন্দর দৃশ্য বা স্মৃতিকে অক্ষত রাখতে চাওয়া।