২০১৩ সালে চীন সর্বপ্রথম One Belt One Road প্রকল্পটি সামনে আনে। পরবর্তীতে এটি পরিচিত হয় Belt and Road Initiative নামে। ১৩৬ টি দেশ এবং ৩০টি আন্তর্জাতিক সংগঠন এই ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রকল্পটির স্বপ্নদ্রষ্টা চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। তিনি একে আখ্যায়িত করেন Project of the century নামে। শুরু থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ বিতর্ক শুরু হয়। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল বেশকিছু দেশ এতে যুক্ত হয়েছিলো। ফলশ্রুতিতে এখানে বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়ার শংকা কিংবা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান এর মত দেশগুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই প্রকল্প আদৌ কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই । কিন্তু চীন শুরু থেকেই ৫০-৫০ সুবিধা দেয়ায় দেশগুলো নানা প্রতিকূলতার পরেও এই প্রকল্পে অংশ নিতে উঠেপড়ে লাগে।
প্রকল্পটি ৫টি সেক্টর নিয়ে কাজ করে। প্রথমত, জাতীয় ও লোকাল পলিসিগুলো আলোচনা করা হয়। একই সাথে রাস্তা, বন্দর, অপটিক্যাল ফাইবার, স্যাটেলাইট এর অবকাঠামো উন্নয়ন করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য এই দেশগুলোকে কোন ট্যারিফ ছাড়া পণ্য আদান-প্রদান এর সুবিধা দেওয়া হয়, যার ফলে দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। এই প্রকল্পটি সহযোগী দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার মত দেশগুলো আমেরিকা ছাড়াও অন্য দেশের বিনিয়োগ পাবার সুযোগ পাচ্ছে, যার মাধ্যমে আমেরিকার প্রভাব কমছে। অন্যদিকে চীনেরও প্রভাব বাড়ছে। একই সাথে এশিয়াতে ভারতের প্রভাবকেও চ্যালেঞ্জ করছে চীন আর এভাবে চীন তার আঞ্চলিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়িয়ে চলছে।
চীন গত কয়েক দশক ধরে তার অর্থনীতি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আর শুধু এশিয়াই নয়, পাশাপাশি আফ্রিকা এবং ইউরোপেও তাদের প্রভাব বাড়বে বলে আশা করা যায়। আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশই চীনের সাথে বাণিজ্য করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। চীনের এই উদ্যগের ফলে তারাও লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আফ্রিকার দেশগুলোর অবকাঠামোগত অবস্থা বরাবরই খারাপ। তবুও চীন এ সমস্ত দেশে বিনিয়োগ করে এসেছ এতদিন ধরে। একই সাথে ইউরোপের অনেক দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বাইরে গিয়ে চীন এবং আরো ১০০টি দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য করতে পারবে।
এ তো গেলো মুদ্রার এক পিঠ। অন্য পিঠে রয়েছে বেশ কিছু নেতিবাচক ঘটনাও। ইতোমধ্যেই দেখা গেছে শ্রীলঙ্কা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর চীনকে দিয়ে দিয়েছে,যা আমাদেরকে চীনের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনাকে মনে করিয়ে দেয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মেগা প্রজেক্ট, পৃথিবীর ৬০% মানুষ এই প্রকল্পের আওতায়। এর মাধ্যমে সন্দেহ ছাড়াই আমরা নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ছাড়াও মুক্ত বাণিজ্যও দেখব। আর পরবর্তী পৃথিবীতে আমেরিকার প্রভাব কতটুকু কমবে সেটা সময়ই বলবে, কিন্তু চীন যে নতুন সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।