DC সুপারহিরো অ্যাকুয়াম্যানকে সবাই কম বেশি চেনে। বাস্তব জগতেও কিন্তু আছেন এমনই এক জলের নিচের সুপার হিরো। কারো কাছে তিনি বাল্টিমোরের বুলেট, কারো কাছে ফ্লাইং ফিশ আবার কারো বিচারে তিনি গ্রেটেস্ট অলিম্পিয়ান অব অলটাইম বলেও স্বীকৃত। জি ,ঠিক ধরেছেন, কথা বলছি মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেল্পসের ব্যাপারে। বাস্তবের এই অ্যাকুয়াম্যানের দখলে আছে সাতারের অসংখ্য রেকর্ড। আর ২০১২ সালের আজকের দিনেই লন্ডন অলিম্পিকে তিনি গড়েন নতুন এক ইতিহাস। আধুনিক অলিম্পিকে এককভাবে সবচেয়ে বেশি পদক জয়ের রেকর্ডটি করে নেন নিজের।
১৯৮৫ সালের ৩০শে জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে ফ্রেড এবং ডেবি দম্পতির কোলজুড়ে আসেন মাইকেল ফ্রেড ফেল্পস। তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন তিনি। বাবা-মার বিচ্ছেদের পর ফেল্পস বেড়ে উঠতে থাকেন মায়ের কাছেই, তার বড় দু’বোনের সাথে ৷ ফেল্পসের সাঁতারের সাথে পরিচয় হয় তার বড় দু’বোনের মাধ্যমে। বড় বোন হুইটনি ১৯৯৬ সালের অলিম্পিক দলে ছিলেন, কিন্তু ইঞ্জুরির কারণে তাকে সাঁতার থেকে সরে আসতে হয়েছিল৷ ফেল্পসের যখন সাত বছর বয়স, তখনও তার পানির নিচে যেতে ভয় হতো, এ অবস্থায় তার কোচ তাকে উপদেশ দেন পিঠে ভর করে ভাসার জন্য। আর মজার বিষয় হল, এভাবেই মাইকেল ফেল্পস ব্যাকস্ট্রোক সাঁতারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ফেল্পস তার সাঁতার ক্যারিয়ার শুরু করেন লয়োলা হাই স্কুলের পুলে এবং সেখানেই পরিচয় হয় তার কোচ বব বাউম্যানের সাথে। বাউম্যান ফেল্পসের প্রতিভায় মুগ্ধ হন এবং সাঁতারের ট্রেনিং এর জন্য নিজেই পুলে নামেন ছাত্রের সাথে।
১৯৯৯ সালে ফেল্পস যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারের বি টিমে সুযোগ পান। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই যুক্তরাষ্ট্র সাঁতার দলের সাথে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেন। ৬৮ বছরের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন মার্কিন সাঁতারু দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। যদিও সে অলিম্পিকে কোন পদক জেতা হয়নি, কিন্তু সুইমিংপুলে তার দাপট দেখিয়ে এসেছেন। ২০০১ সালে মাত্র ১৫ বছর ৯ মাস বয়সে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই সাঁতারে বিশ্বরেকর্ড করে বিশ্বকে তার আগমনী বার্তা দেন ফেল্পস। ২০০৩ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পাঁচটি বিশ্বরেকর্ড যোগ হয় তার ঝুলিতে। ২০০৪ সাল ছিল মাইকেল ফেল্পসের বছর। সেবছরের এথেন্স অলিম্পিকে ৬ টি স্বর্ণপদক সহ মোট আটটি পদক লাভ করেন তিনি। এরপর আর ফেল্পসকে পেছনে ফেরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক বিশ্বরেকর্ড করে গোটা পৃথিবীর ক্রীড়াপ্রেমীদের রোমাঞ্চিত করেছেন বারবার৷
এরপর ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে আটটি স্বর্ণপদক জিতে তার সর্বমোট পদক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ তে। এরই সাথে তিনি অলিম্পিকের সর্বাধিক স্বর্ণপদকধারীর রেকর্ড নিজের করে নেন। এরপর ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে তিনি আবারো সুইমিংপুলে তার দাপট দেখান এবং জিতে নেন ৬ টি পদক৷ এই অলিম্পিকের আসরেই ২০১২ এর ৩১ জুলাই তার পদক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ এ এবং স্বীকৃতি পান অলিম্পিকের একক সম্রাট হিসেবে৷ এই অলিম্পিক শেষ তার পদক সংখ্যা হয় ২২। এরপর হঠাৎই সাঁতার থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। কিন্তু এক বছর বাদেই আবার ফিরে আসেন এবং সর্বশেষ ২০১৬ অলিম্পিকে নবীন সাঁতারুদের সাথে পাল্লা দিয়ে জিতে নেন আরও ৬ টি পদক। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকে তাকে দেখা যাবে কিনা সে নিয়ে ছিলো ব্যাপক সংশয়। তবে ক্রীড়াপ্রেমিদের প্রত্যাশা সবাইকে রোমাঞ্চে ভাসাতে আবারও হয়তো তিনি ঝাঁপ দেবেন সাঁতারের পুলে।