মানুষ চিরকালই কৌতূহলী। অজানাকে জানবার নেশা, অজেয়কে জয় করার প্রবল তৃষা মানবজাতিকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই অদম্য স্পৃহার ফলেই পৃথিবীর গণ্ডি ছাড়িয়ে মহাকাশেও বিচরণ করছে তারা। এই বিজয় কিন্তু একবারে আসেনি। বরং সাফল্য ও ব্যর্থতার মিশ্রণেই তৈরি হয়েছে এই মাইলফলক। মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান “অ্যাপোলো ৭”, যার সাফল্য ভূমিকা রেখেছিলো মানুষের চন্দ্রজয়ে। ১৯৬৮ সালের ১১ অক্টোবর ঐতিহাসিক এই অভিযানটির সূচনা হয়।
অ্যাপোলো সিরিজের প্রথম মনুষ্যনিয়ন্ত্রিত অভিযান ছিলো অ্যাপোলো ৭। অর্থাৎ এবারই প্রথম অ্যাপোলো সিরিজের রকেটে নভোচারী প্রেরণ করা হয়, সংখ্যায় তারা ছিলেন তিনজন, সবাই আমেরিকান। এর আগের অ্যাপোলো অভিযানগুলো পৃথিবী থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতো, এবং তাতে কোনো জীবিত মানুষ ছিলো না। নাসা’র উদ্দেশ্য ছিলো এই অভিযানের মাধ্যমে তাদের সর্বশেষ রকেট প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখা। এছাড়াও মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকলে কী ধরণের প্রভাব পরে নভোচারীদের ওপর, সেটিও পরীক্ষা করে দেখে তারা। বলাই বাহুল্য, চাঁদে মানুষ পাঠানোর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবেই চালানো হয় এই অভিযান।
অ্যাপোলো ৭ এর তিন নভোচারী ছিলেন যথাক্রমে ওয়ালি শিরা, ডন এইসেল ও ওয়াল্টার কানিংহ্যাম। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল বেস স্টেশন থেকে স্যাটার্ন আইবি রকেটে করে যাত্রা শুরু হয় তাদের। এই অভিযানেই প্রথমবারের মত অ্যাপোলোর কমান্ড এবং সার্ভিস মডিউলের নিয়ন্ত্রণ দেয়া হয় নভোচারীদের হাতে। একই ধরণের কমান্ড ও সার্ভিস মডিউলই পরবর্তীতে ব্যবহৃত হয় চন্দ্রজয়ী অ্যাপোলো ১১ তে। মোটকথা চন্দ্রজয়ের অভিযানকে সামনে রেখেই অ্যাপোলো ৭ অভিযানের ছক এঁকেছিলো নাসা। এই অভিযানের অভিজ্ঞতাই পরে কাজে লাগানো হয় অ্যাপোলো ১১ তে।
মহাকাশচারীরা মোট ১১দিন ছিলেন অ্যাপোলো ৭ এ। চমক হিসেবে এই অভিযানটি সরাসরি টিভিতেও দেখানো হয়েছিলো, যা ছিলো প্রথম লাইভ টেলিকাস্ট হওয়া কোনো মহাকাশ অভিযান। এই অভিযানের ২১ মাস আগে অ্যাপোলো ১ অভিযান ব্যর্থ হয় এবং কেবিনে আগুন লেগে সেটির ক্রু’রা নিহত হন। ফলে অ্যাপোলো ৭ এর বেলায় সবাই বেশ উৎকণ্ঠাতেই ছিলো। কিন্তু সবার সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশিদিন মহাকাশে অবস্থান করে অ্যাপোলো ৭, বড় ধরণের কোন সমস্যা ছাড়াই। অতঃপর ২২শে অক্টোবর আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণের মাধ্যমে সফলভাবে সমাপ্ত হয় অ্যাপোলো ৭ অভিযান।